ইএমআইএস: নকশা ও বাস্তবায়ন – উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার

ইএমআইএস: নকশা ও বাস্তবায়ন – উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার

২০১৫ সালে টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল এবং হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় পাইলট বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইএমআইএস-এর যাত্রা শুরু। পাইলট সফল হলে জেলা দুটির বাকি উপজেলাগুলোতে ইএমআইএস-সম্প্রসারণ করা হয়। ২০১৮ সালের পর থেকে ক্রমান্বয়ে ইএমআইএস-এর পরিসর বাড়তে শুরু করে এবং ২০২০ সালের শেষে বাস্তবায়িত জেলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬টিতে, যা দেশের মোট জেলাগুলোর ৫০%এরও বেশি।

এই সময়গুলোতে ব্যবহারকারীরা ইএমআইএস-এর যাত্রায় সামিল ছিলেন। তারা এর বিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। আমরা ব্যবহারকারীদের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল, সফটওয়ার উদ্ভাবন ও প্রচলনকালে তাদের সাথে কতটুকু যোগাযোগ করা হয়েছিল এবং সেগুলোর প্রয়োগ ও মান উন্নয়নে তাদের কতটুকা ভূমিকা ছিল, সে সম্পর্কে জানা।

আমরা এ পর্বে আইভি ইয়াসমিন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছি। তিনি টাঙ্গাইল জেলার টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় কর্মরত আছেন। সাক্ষাৎকারটি ডিসেম্বর ২০২০-এর শুরুতে গ্রহণ করা হয়।

প্রশ্ন:     ইএমআইএস-এর বাস্তবায়নের কোন পর্যায় থেকে আপনি যুক্ত ছিলেন? ইএমআইএস-এর শুরুটা কেমন ছিল, তা কি আমাদের জানাবেন?

উত্তর:    আমি শুরু থেকেই ইএমআইএস-এর সাথে যুক্ত ছিলাম, কারণ, টাঙ্গাইল থেকেই ইএমআইএস-এর যাত্রা শুরু হয়।  আমাদের মধ্যে নানা বয়সের কর্মী ছিলেন। সবার ডিজিটাল মাধ্যম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ছিল না। সেগুলোর ব্যবহার সম্পর্কেও ভালভাবে অবহিত ছিলেন না। তবে শুরুটা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও সার্বিক বিবেচনায় আমাদের কর্মীরা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে অত্যন্ত সফল হয়েছেন বলে আমি মনে করি। যাদের বয়স একটু বেশি ছিল, তাদের জন্য চ্যালেঞ্জটা বেশী হলেও তারা পরীক্ষায় চমৎকারভাবে উতরে গেছেন এবং সফলকাম হতে পেরেছেন। আমরা নিয়মিতভাবে তাদের উদ্বুদ্ধ করেছি, on spot training-এর ব্যবস্থা করেছি। কাজেই শুরু থেকেই ইএমআইএস ভালোভাবে এগিয়ে গেছে।

প্রশ্ন:     ইএমআইএস-এর বাস্তবায়নের সময় আপনাদের সাথে প্রোগ্রামার বা বাস্তবায়ন টিমের সাথে সংযোগ কিভাবে হয়েছিল?

উত্তর:    বাস্তবায়ন টিম ও প্রোগ্রামারদের এর সাথে ফিল্ড ভিজিট, সভা ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে। প্রতিমাসে উপজেলা পর্যায়ে আমাদের মাসিক পর্যালোচনা সভা নয়। সেগুলোতে তাদের আমন্ত্রণ জানাতাম, তারা উপস্থিত থাকতেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে মাঠকর্মীদের পাক্ষিক সভা হয়। কোন কোনটিতে তারাও উপস্থিত থেকেছেন। ফোনের মাধ্যমেও যোগাযোগ হয়েছে। মোট কথা, তাদের সাথে অব্যাহত যোগাযোগ ছিল ।

প্রশ্ন: এই সংযোগের ফলাফল কি ছিল? একটু বিশদভাবে বলুন।

উত্তর: এই সংযোগের ফলে কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সমাধান পাওয়া যেতো এবং তারা যেগুলো না পারতেন তা উপরে পাঠিয়ে দিতো।

প্রশ্ন:     বাস্তবায়নকারীদের কি আপনাদের চাহিদা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা ছিল, সেগুলো বোঝার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান ছিল? পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্পর্কে, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের কাজ বা দায়িত্ব সম্পর্কেই বা তাদের জ্ঞান কতটুকু ছিল?

উত্তর: তারা আমাদের চাহিদা বুঝত। কোন অস্পষ্টতা থাকলে বা বুঝতে না পারলে আমরা সহায়তা করেছি, বুঝিয়ে দিয়েছি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে অর্গানোগ্রাম বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের কাজ সম্পর্কে তাদের ভালো ধারণা ছিল। মোটকথা আমরা একটা টিমের মত কাজ করেছি।

প্রশ্ন:     আপনারা কি তাদের কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন? দিয়ে থাকলে, সে পরামর্শগুলো কতটুকু গুরুত্বের সাথে গৃহীত হয়েছিল বলে আপনার মনে হয়?

উত্তর:    আমরা অনেক বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। মাঠ পর্যায়ের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় ছিল। এ্যাপে সেগুলোর প্রতিফলন দরকার ছিল। তারা গুরুত্বের সাথে আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন, সমাধান দিয়েছেন।

প্রশ্ন:     এ্যাপ পরিচালনায় কোন সমস্যা হলে কি করেছেন? আপনি কি বাস্তবায়নকারীদের কোন সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন? সেগুলোর সমাধান কি হয়েছিল? কি রকম সময় লেগেছিল এর সমাধানে?

উত্তর:    এ্যাপ পরিচালনায় মাঝে মধ্যে সমস্যা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নকারীদের জানিয়েছি। সমস্যাগুলোর সমাধান তারা দিতে পেরেছেন। কিছু কিছু সমস্যা সঙ্গে সঙ্গেই কথা বলে সমাধান করতেন। কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য সময়ও লাগতো। মাঝে মধ্যে সপ্তাহ খানেক বা বেশি সময় লেগেছে।

প্রশ্ন:     কর্মীরা যেভাবে কাগজের রেজিস্টারে কাজ করতেন, তার তুলনায় এ্যাপ-এ কতটুকু পরিবর্তন এসেছে? পরিবর্তনগুলো কি রকম? ভালো না মন্দ? সংক্ষেপে বলুন।

উত্তর:    বড় পরিবর্তন হচ্ছে এখন কিছুই হাতে লিখতে হয় না। ট্যাবের মাধ্যমেই অল্প সময়ে কাজ করা যায়। ট্যাবে কাজ করার ফলে সময় কম লাগে। মাস শেষে এমআইএস রিপোর্ট তৈরি করতে কোন হিসাব নিকাশ করতে হয় না। এ্যাপেই সব তৈরি হয়ে যায়। সব মিলিয়ে পরিবর্তনগুলো অবশ্যই ভালো।

প্রশ্ন:     এ্যাপ ব্যবহারে আপনি কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন? সময়ের সাথে সাথে এ্যাপের গুণগত মানে কোন পরিবর্তন এসেছে কি? তা কি ক্রমান্বয়ে উন্নত হয়েছে?

উত্তর:    সময়ের সাথে সাথে অবশ্যই পরিবর্তন হয়েছে এ্যাপের। ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে। প্রতিটি ভার্সনেই পরিবর্তন আসছে এবং সেগুলো আরো বেশি user friendly বা ব্যবহারকারী-বান্ধব হচ্ছে।

প্রশ্ন:     অফলাইনে কাজ করতে কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সব কাজ কি অফলাইনে করা যায়?

উত্তর:    অনলাইনে কাজ করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। অফলাইনে অনেক সময় ডাটা ঠিকমত সিঙ্ক হয় না।

প্রশ্ন:     এখন কোন ধরনের কারিগরি সমস্যা আপনার কাছে প্রধান মনে হয়?

উত্তর:    বর্তমানে ইন্টারনেটই প্রধান সমস্যা মনে হয়। সেই সাথে ট্যাবেও কিছুটা সমস্যা হয়। ট্যাবগুলো অনেক পুরনো এবং ঠিকমত কাজ করে না। অনেক ট্যাবই নষ্ট।

প্রশ্ন:     ইএমআইএস-এ নতুনত্ব বা নতুন ইনোভেশন কি কিছু ছিল? যদি থাকে, সেগুলো কি আপনাদের কাজকে সমৃদ্ধ করেছে?

উত্তর:    অনেক নতুনত্ব আছে। মনিটরিং করার জন্য টুলগুলো আছে, সেগুলো অত্যন্ত ভালো। এক সাথে সব কর্মীর কাজ পর্যালোচনা করা যায়। বিশেষ করে, তারা মাঠে যাচ্ছে কিনা; লগ ইন করছে কিনা – সেগুলো জানা যায়। এগুলো আমাদের কাজকে বেশ সমৃদ্ধ করেছে। অন্যদিকে, আমাদের মাঠকর্মীরা ট্যাবের মাধ্যমে শিক্ষামূলক ভিডিও গুলো ডাউনলোড করতে পারেন। তারা সেগুলো মাঠ পরিদর্শনের সময় ব্যবহার করে থাকেন।

প্রশ্ন:     সবশেষে বলুন, ইএমআইএস-এর আপনাদের চাহিদা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে? আপনাদের কোন চাহিদাগুলো পূরণ হয় নি? ভবিষ্যতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কি করা উচিত?

উত্তর:    eMIS একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। নিত্য এর পরিবর্তন হচ্ছে, এাপগুলো আরো ব্যবহারকারী-বান্ধব হচ্ছে। আগে ভার্সনের সাথে রিলিজ নোট থাকতো না। আমাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে রিলিজ নোট যুক্ত করে এ্যাপে কি কি পরিবর্তন আসলো তা জানানো হচ্ছে, যা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। তবে এখনকার বড় সমস্যা ট্যাব। অনেকগুলো বদলানো দরকার। একদিনের জন্যও যদি একটি ট্যাব বন্ধ থাকে, তবে কোন ডাটা এন্ট্রি হবে না। রিপোর্ট সঠিক হবে না। তাই আমি মনে করি, প্রতি উপজেলায় রিজার্ভে কিছু ট্যাব থাকা দরকার। কোন সমস্যা হলে যেন তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তন করে দেয়া যায়। এছাড়াও, বর্তমানে প্রতি উপজেলায় এক জন করে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ দিয়ে ট্রাবলশুটার হিসেবে তৈরি করা হয়েছে, যারা বেশ দক্ষতার সাথে কাজ করছে। যদি প্রত্যেক এফপিআই-কেই ট্রাবলশুটারের প্রশিক্ষণ দেয়া যায়, তাহলে ইউনিয়নের কাজ আরও ভালো হবে বলে মনে করি।

By |2021-01-05T10:04:52-06:00 Published on December 31, 2020| Updated on January 05, 2021|Uncategorized|0 Comments

Leave A Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.