ইএমআইএস: নকশা ও বাস্তবায়ন – পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের দৃষ্টিতে: সাক্ষাৎকার – ২

ইএমআইএস: নকশা ও বাস্তবায়ন – পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের দৃষ্টিতে: সাক্ষাৎকার – ২

বাসাইল, টাঙ্গাইল এবং মাধবপুর, হবিগঞ্জ – এ দুটি উপজেলায় পাইলট বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০১৫ সালে ইএমআইএস-এর যাত্রা শুরু হয়। ইএমআাইএস একগুচ্ছ এ্যাপ এবং ওয়েবভিত্তিক এপ্লিকেশনের সমন্বয়ে তৈরি একটি ডিজিটাল ইকোসিস্টেম বা প্রতিবেশ-ব্যবস্থা। পাইলট সফল হলে জেলা দুটির বাকি উপজেলাগুলোতে ইএমআইএস-এর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়। ২০১৮ সালের পর থেকে ক্রমান্বয়ে এর পরিসর বাড়তে শুরু করে। ইএমআইএস বাস্তবায়িত হয়েছে, এমন জেলার সংখ্যা এখন ৩২টি, যা দেশের মোট জেলাগুলোর ৫০%।

আমরা এ ওয়েবসাইটের ব্লগ পাতায় ব্যবহারকারীদের মতামত ক্রমান্বয়ে তুলে ধরছি। ইতোপুর্বে ইএমআইএস এ্যাপগুলোর নকশা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার উপর একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে। এ পর্যায়ে মোঃ ইমরান খান, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক-এর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হল। তিনি টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নে কর্মরত আছেন। তিনি একেবারে শুরু থেকে ইএমআইএস-এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা এ্যাপের নকশা, নির্মাণ ও মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। কোন দুর্বলতা থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করেছেন। তাই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ্যাপের ব্যবহারযোগ্যতা বাড়াতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। অন্যদিকে, তারা এর বিবর্তনও লক্ষ্য করেছেন। আমরা তাঁর কাছে এ্যাপ/সফটওয়ার উদ্ভাবন ও নকশা প্রণয়নে মাঠ পর্যায়ের ব্যবহারীদের কতটুকু সম্পৃক্ততা ছিল এবং সেগুলোর প্রচলন ও মান উন্নয়নে তারা কি ভূমিকা রেখেছিলেন, তা জানার জন্য কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম। আমাদের প্রশ্ন ও তাঁর উত্তর এখানে সন্নিবেশ করা হল। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন জনাব কাজী মোহাম্মদ ওবায়দুল হক।

প্র: আপনি অনেকদিন ধরে ইএমআইএস-এর সাথে সম্পৃক্ত আছেন। আমাদের সাথে অনেক প্রশিক্ষণেও অংশগ্রহণ করেছেন। ঠিক কখন থেকে বা বাস্তবায়নের কোন পর্যায় থেকে আপনি ইএমআইএস-এর সাথে যুক্ত হয়েছিলেন, তা কি আমাদের বলবেন?

উ: আমি একেবারে শুরু থেকেই ইএমআইএস-এর সাথে যুক্ত আছি। ২০১৫ সালে বাসাইলে যখন পাইলটিং শুরু হয়, তখন থেকেই।

প্র: টাঙ্গাইল জেলায় বাসাইলেই ইএমআইএস-এর প্রথম পাইলটিং করা হয়েছিল, তাই না। সেই শুরুতে আপনাদের অনুভূতি কেমন ছিল? আদৌ কি এটা বাস্তবায়নের দরকার ছিল?

উ: আমরা খাতা-কলমে কাজ করতাম। আইসিডিডিআরবি-র টিম আমাদের ডিজিটাল পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রযুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী ছিলাম। খাতা কলমের এনালগ পদ্ধতিটাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের বিষয়টি নিয়ে আমি ভেবেছিলাম। তাই ইএমআইএস যখন শুরু হল, আমি সেটি নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী ছিলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম, এটি থেকে আমরা সুফল পাব।

প্র: আপনি আইসিডিডিআরবি-র কথা বললেন, তারা আপনাদের এখানে বাস্তবায়নকারী ছিল। কিভাবে কাজ শুরু করল। প্রথমে কি ট্রেনিং হয়েছিল, কোন সভা-টভা হয়েছিল কি? কিভাবে তাদের সাথে আপনাদের যোগাযোগ শুরু হল?

তারা আমাদের রেজিস্টার পরীক্ষা করেছেন, আমাদের কাজের ধরন আর কাজের পরিধি সম্পর্কে জেনেছেন। মাঠের বাস্তবতা অনুধাবন করেছেন। খুঁটিনাটি দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। সব কিছু বিশ্লেষণের পরই তারা ডিজিটাল পদ্ধতির কাজ শুরু করেছিলেন।

উ: আসলে প্রথমে ট্রেনিং নয়। তারা অনেকবার বাসাইলে এসেছেন, আমাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছেন। এসেছেন বহুবার। আমার মনে হয়, পাইলট সাইট হওয়াতে এখানে তাদের সব চাইতে বেশি আসা হয়েছে। তারা আমাদের রেজিস্টার পরীক্ষা করেছেন, আমাদের কাজের ধরন আর কাজের পরিধি সম্পর্কে জেনেছেন। মাঠের বাস্তবতা অনুধাবন করেছেন। খুঁটিনাটি দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। সব কিছু বিশ্লেষণের পরই তারা ডিজিটাল পদ্ধতির কাজ শুরু করেছিলেন।

প্র: তার মানে কি মাঠ পর্যায়ে আপনার কিভাবে কাজ করেন, সে সম্পর্কে তাঁরা প্রথমে পূর্ণাঙ্গ ধারণা গ্রহণ করেছেন। তারপর এ্যাপের নকশা ও উন্নয়নের কাজ শুরু করেছেন, তাই কি?

উ: হ্যাঁ, তাই। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে তারা ভালোভাবে জেনে তার ভিত্তিতে ডিজিটাল রূপান্তর শুরু করেছেন।

প্র: সামগ্রিকভাবে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাদের জ্ঞান কেমন ছিল বলে আপনার মনে হয়?

উ: আমার জানা মতে তাদের বেশ ভালো ধারণা ছিল। এমন অনেক বিষয় ছিল, যেগুলো হয়তো আমাদের কাছে ততটা পরিষ্কার ছিল না। কিন্তু তাদের ধারণা সে সব বিষয়গুলোতে ছিল পরিষ্কার। তারা আমাদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করলেও বাস্তবে তাদের জানার পরিধি অনেক বড় ছিল। তাদের ভালো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল, অনেক তথ্য-উপাত্ত তাদের সংগ্রহে ছিল।

প্র: আপনি কি শুরুতে এ্যাপগুলো কিভাবে আরো ভাল করা যায়, সে বিষয়ে কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?

উ: আমি তাদের সাথে পুরো প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলাপ করেছি, মতামত রেখেছি। তারা আমার অনেক মতামত গ্রহণও করেছেন।

প্র: এ্যাপ পরিচালনায় কোন সমস্যা হলে আপনারা কি তাদের জানিয়েছিলেন? তারা সেগুলোর সমাধান কি দিতে পেরেছিলেন? কেমন সময় লেগেছিল তাদের।

উ: কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত সমাধান হয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় লেগেছে। তবে আইটি সেক্টরের কাজ তো — একটু সময় লাগতেই পারে। আমার কাছে মনে হয়েছে, সময় লাগাটাই স্বাভাবিক।

প্র: আগে আপনারা কাগজ-কলম নিয়ে কাজ করতেন, এখন করছেন এ্যাপের সাহায্যে। এই পরিবর্তনটা কেমন মনে হয়, ভালো না খারাপ?

উ: অনেক ভালো। যেমন, রেজিস্টারে যেসব তথ্য আছে, সেগুলোর ভিত্তিতে অনেক গণনার কাজ করতে হয়। যেমন, কারো কর্ম-এলাকায় কতগুলো গর্ভবতী আছে, তাদের কতগুলো এএনসি দেয়া হয়েছে, কতজনের পিএনসি প্রাপ্য, ইত্যাদি। সেগুলো সব রেজিস্টার খুঁজে খুঁজে বের করতে হতো, গুণে গুণে সংখ্যা নির্ণয় করতে হতো। এখন এ্যাপ ব্যবহারের কারণে আমাদের সব তথ্য আমাদের চোখের সামনেই থাকে। আমরা একটা ক্লিকের মাধ্যমে বা সার্চ করেই সব তথ্য খুঁজে বের করতে পারি। গণনার কাজটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যায়। তাই সুবিধা অনেক।

প্র: আপনারা কি এ্যাপ ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

উ: নিশ্চয়ই। অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এ্যাপে কাজ করাটা অনেক সহজ।

প্র: ২০১৫ সাল থেকে এ্যাপ ব্যবহার শুরু হয়েছে, আপনার কি মনে হয় সময়ের সাথে সাথে এ্যাপের অনেক উন্নতি হয়েছে, নাকি তেমন কোন উন্নতি হয় নি?

উ: এই সময়ে আমরা এ্যাপের অনেক আপডেট পেয়েছি, নতুন ভার্সন পেয়েছি। আপডেটে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। আসলে কি, কাজ করতে গিয়ে অনেক নতুন নতুন সমস্যা দেখা দেয়। আর নতুন সমস্যা দেখা দিলে সেটি ঠিক করা প্রয়োজন হয়। এখন যে পর্যায়ে এ্যাপ আছে, তার ভিত্তিতে আমার মনে হয়, আমরা বেশ ভালো পর্যায়ে আছি।

প্র: অফলাইনে তো অনেক সময় কাজ করা দরকার হয়, কাজ করতে পারেন কি?

উ: অফলাইনে কাজ করতে কোন সমস্যা হয় না। সারা দিন কাজ করে ডাটা সিঙ্ক করার সময় অনলাইনে গেলেই হয়।

প্র: এখন আপনার কোন সমস্যা প্রধান মনে হয়, এ্যাপ, ইন্টারনেট, না কি অন্য কিছু?

উ: এ্যাপে এখন কোন সমস্যা নেই। আমরা কিছু ভিন্ন  ধরনের। যেমন, আমাদের স্টাফরা অনেক সময় স্টোরেজ ফুল করে ফেলে। তখন হা্র্ডওয়ার বা সফটওয়ারের কিছু সমস্যা হতে পারে। বর্তমানে আমাদের সার্ভারজনিত কিছু সমস্যা আছে বলে মনে হয়।

প্র: ইএমআইএস তো একটা নতুন জিনিষ বা ইনোভেশন। এই নতুনত্ব আপনাদের কাজকে সমৃদ্ধ করেছে?

উ: অবশ্যই করেছে। আমাদের কাজের আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের কাজের মানের উন্নতি হয়েছে। সফটওয়ারের উন্নয়ন সব সময়ই হচ্ছে, কোন বাগ থাকলে সেগুলো ঠিক করা যায়। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু করার আছে। যেমন দেখুন ফেসবুক, পুরোনো কিন্তু নিয়মিত নতুন ভার্সন আসেছে। আমার মনে হয়, নতুন কিছু করার সুযোগ সব সময়ই আছে।

পেপার রেজিস্টারে যেসব তথ্য আছে, সেগুলোর ভিত্তিতে অনেক গণনার কাজ করতে হয়। যেমন, কারো কর্ম-এলাকায় কতগুলো গর্ভবতী আছে, তাদের কতগুলো এএনসি দেয়া হয়েছে, কতজনের পিএনসি প্রাপ্য, ইত্যাদি। সেগুলো সব রেজিস্টার খুঁজে খুঁজে বের করতে হতো, গুণে গুণে সংখ্যা নির্ণয় করতে হতো। এখন এ্যাপ ব্যবহারের কারণে আমাদের সব তথ্য আমাদের চোখের সামনেই থাকে। আমরা একটা ক্লিকের মাধ্যমে বা সার্চ করেই সব তথ্য খুঁজে বের করতে পারি। গণনার কাজটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যায়। তাই সুবিধা অনেক।

প্র: আপনারা ইএমআইএসকে কিভাবে দেখতে চান? অধিদপ্তরের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি? কি করলে আপনাদের সন্তুষ্টি বাড়বে?

উ: অধিদপ্তরের কাছে আমাদের চাওয়া অনেক আছে। ইন্টারনেটের সমস্যা কিছুটা ব্যাপক। অনেক সময় কানেকশন থাকে না। এটা ঠিক করা দরকার। সার্ভার নিয়ে কিছু সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়। মাস শেষে রিপোর্ট করতে গেলে অনেক সময় সমস্যা হয়। সার্ভারের ক্ষমতা হয়তো বাড়ানো দরকার। সমস্যাগুলোর কথা এজন্য বলছি, যেন সমাধানের উপায় পাওয়া যায়। আমরা না জানালে সমাধানও আসবে না, আর আমরা হয়তো ভুগতে থাকবো। এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।

প্র: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সুন্দরভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার জন্য।

উ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

By |2020-12-17T11:28:47-06:00 Published on December 17, 2020| Updated on December 17, 2020|Uncategorized|0 Comments

Leave A Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.